রাজধানী

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে আরেকটি সমান্তরাল সরকার কার্যকর রয়েছে…দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

  প্রতিনিধি ২৩ জুলাই ২০২৫ , ২:৪৪:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো আয়োজিত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে আরেকটি সমান্তরাল সরকার কার্যকর রয়েছে।

‘বুধবার ২৩শে জুলাই, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এই আলোচনা শুরু হয় উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করেন অংশগ্রহণকারীরা।

আলোচনায় দেবপ্রিয় বলেন, সরকার যেভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আসে, বাস্তবে তার বাইরেও একটি কাঠামো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে—এটা এখন আর গোপন বিষয় নয়। সরকারের নিরপেক্ষতা, বিশেষ করে দলীয় নিরপেক্ষতার প্রশ্ন এখন কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী চেতনায় গঠিত হলেও, এই অন্তর্বর্তী সরকার তা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারে প্রতিফলিত করতে পারেনি। দুর্বল জনগোষ্ঠী, নারী, সংখ্যালঘু এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব বা নিরাপত্তার দিক থেকেও রাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থান স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রশাসনিক কাঠামো, যা স্থায়ী নয়। ফলে এই সরকারের নিরপেক্ষতা এবং নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা এখন প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি আমরা একটি প্রকৃত অর্থে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, তাহলে শুধু প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভর করলেই চলবে না। সেনাবাহিনীর আরও সক্রিয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ভূমিকা প্রয়োজন হবে।” তিনি মনে করেন, অস্ত্র উদ্ধারসহ নির্বাচনী শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে তিন-চার মাস মাঠে থাকতে হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক নিয়েও জনগণের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।” তাই সরকারকে এখন স্পষ্টভাবে তার লক্ষ্য ও দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়ে তার লক্ষ্য ও সংস্কার পরিকল্পনা স্পষ্ট করবেন।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই সংস্কারের দিকনির্দেশনা দিতে হবে এবং নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও উদ্যোক্তাদের উচিত তাদের সেই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা ও প্রয়োজনে আন্দোলনে নামা।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “গত বছরের মূল্যায়ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সামনে কীভাবে এই সরকার দায়িত্ব থেকে সরে আসবে—সেই ‘এক্সিট পলিসি’ ও ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ নিয়ে এখন ভাবার সময়।”

আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক ফরহাদ মজহার, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আইনজীবী সারা হোসেন, লেখক আলতাফ পারভেজ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, গবেষক মাহা মীর্জা এবং পিআইবির গবেষণা বিশেষজ্ঞ সহুল আহমদ প্রমুখ।

আরও খবর

Sponsered content