প্রতিনিধি ৩ আগস্ট ২০২৫ , ৫:৫৫:১১ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুলাইয়ের গণআন্দোলন দমনকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রোববার (০৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর তিন সদস্যের বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা শাস্তি চাই আইনি পরিকাঠামোয়। যে উপাদান প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনবে সেগুলো বিশ্লেষণ করে এবং সাক্ষ্য শুনে আগামী প্রজন্মের জন্য ন্যায়বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, “বিগত আমলে গুম খুনের পলিটিকাল কালচার তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এমন একটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেখানে খুনের রাজনীতি আর থাকবে না।
শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অন্যতম আসামি। এছাড়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি একই মামলায় আসামি ছিলেন, তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এখন রাজসাক্ষী হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়। নতুন করে গঠিত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামাটিই ছিল প্রথম। এতে ‘ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়’ (সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি) নীতির আওতায় তাকে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত করা হয়।
চলতি বছরের ১২ মে তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন হাতে পায় ট্রাইব্যুনাল। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম পরে তা যাচাই করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার এই অভিযোগপত্রে রয়েছে তথ্যসূত্রের জন্য ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দ তালিকা ও প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা, এবং শহীদদের তালিকা ও বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। মামলায় সাক্ষী রয়েছেন ৮১ জন।
গত ০১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। পরে ১৬ জুন পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির করার নির্দেশ দেয় আদালত। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও তারা না আসায় ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু করে এবং ১০ জুলাই মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় তার শাসনামলে দীর্ঘ ১৫ বছরে গুম ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেকটি মামলা রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে।
জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সরকারের, দলীয় ক্যাডারদের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অভিযোগের বিচার চলছে দুইটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধিত আইনের মাধ্যমে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।