প্রতিনিধি ২৪ জুলাই ২০২৫ , ২:৪৬:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
আ জা ডেক্স:
বাংলাদেশে গণহত্যা’ ইস্যুতে দিল্লিতে পরিকল্পিত একটি সংবাদ সম্মেলন শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছেন।সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। আয়োজকরা দাবি করেছেন, ঢাকায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় বহু শিশুর প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়ে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (BHRW) নামে একটি বিতর্কিত সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠানটি আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। যদিও সংগঠনটির কার্যক্রম ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তবুও আয়োজক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী নিজেকে এর যুক্তরাষ্ট্র শাখার মহাসচিব হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং আগেও শেখ হাসিনার পক্ষে একাধিক প্রবাসী অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন।
আয়োজকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাম্প্রতিক গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ ও দেশে কথিত ‘গণহত্যা’ ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার কথা ছিল আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রীর। জানা গেছে, সম্প্রতি দলের যেসব নেতা দিল্লি সফর করেছেন— তাদের মধ্যে হাসান মাহমুদ, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মোহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের কেউ কেউ এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সম্মেলন শুরুর কিছুক্ষণ আগে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে জানান, “ঢাকায় এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে তারা অনুষ্ঠান স্থগিত করেছেন। ওই দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের বেশি, যাদের বেশিরভাগই শিশু, নিহত হয় এবং প্রায় ১৭০ জন আহত হন।”
তিনি আরও বলেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেছি।” সিদ্দিকী জানান, পরবর্তী সময়ে নতুন তারিখে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে। সেই সঙ্গে তিনি দুর্ঘটনার ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত দাবি করেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পুরনো অভিযোগগুলোও তুলে ধরেন।
এদিকে দিল্লিতে নিযুক্ত কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সম্মেলনটি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানানো হয়েছিল। কারণ, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে, আর এই সময় একটি রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিতে পারে এমন আয়োজন দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রচেষ্টায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।
সূত্রগুলো আরও জানায়, ভারত শুরু থেকেই বাংলাদেশ ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার কথা বলেছে। তাই এমন সংবেদনশীল রাজনৈতিক আয়োজনে ভারত সরকারের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
তবে এ বিষয়ে এখনো ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে টানা ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশি পণ্যের ওপর একাধিক আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যার প্রভাব পড়ে উভয় দেশের স্থল ও সমুদ্রপথে বাণিজ্যে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।