প্রতিনিধি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ১:৪০:১১ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর ডেমরায় বেধড়ক মারধরের শিকার আহত অপহৃত মাছের খামারি রেজাউল হক (৩৬) কে উদ্ধার করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকালে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয় পুলিশ। ডেমরার সারুলিয়া ওয়াসা রোড এলাকায় ঘটা চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় দেশীয় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী রুদ্র বাহিনীর দুই সদস্যকে গ্রেফতারে পর ওই রাতেই ডেমরা থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে গ্রেফতার বাদশা ঢালী ও ছাফওয়ান হোসেন রিফাতকে শুক্রবার বিকালে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
এদিকে অপহৃত রেজাউল হক বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া সারুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আশরাফুজ্জামান বাদী হয়ে রুদ্র বাহিনীর ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টার দিকে ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওয়াসা রোড বালুর মাঠের পাশে একটি ছোট টিনের ঘর থেকে অপহৃত রোজাউলকে উদ্ধার করতে যায় সারুলিয়া ফাঁড়ির পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আসামিরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আসামি ইখলাক খান রুদ্র ও সুজাত’র নির্দেশে সোহেল ওরফে কাইল্লা সোহেল লোহার শিকল দিয়ে কনস্টেবল জুয়েল রানার মাথায় আঘাত করে গুরুতর আহত করে। এসময় অন্যান্য আসামীরা কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে পুলিশ সদস্যদের নিলা ফুলা জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এদিকে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় কনস্টেবল জুয়েলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হলে তার মাথায় ৮ টি সেলাই দিতে হয়েছে।
এদিকে হামলার পরপরই ডেমরা থানার ওসি মো. মাহমুদুর রহমান তাৎক্ষনিক সঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইখলাক খান রুদ্রের হেফাজতে থাকা লোহার হাতলযুক্ত দেশীয় চাকু, চাপাতি, দা, লোহার পাইপ ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় রুদ্র বাহিনীর প্রধান ইখলাক খান রুদ্র, সোহেল কাইলা সোহেল, সুজাত, ইমন, আব্দুল্লাহ, আকাশ, মোঃ সাজিত, হাফেজ, ছাফওয়ান হোসেন রিফাত ও বাদশা ঢালী, সহ আরও ২৫-৩০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জড়িত ছিল এবং তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
ভুক্তভোগী রেজাউল হক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে তিনি তার কর্মচারীদের নিয়ে করিম জুট মিলসের পাশে তার মাছের খামারে গেলে অভিযুক্তরা তাকে ঘিরে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা রেজাউল ও তার কর্মচারীদের মারধর করে। পরে দুপুর দেড় টার দিকে অভিযুক্তরা রেজাউলকে অপহরণ করে ডেমরার ওয়াসা রোডে একটি ছোট টিনের ঘরে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে তাকে বেধড়ক মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে মুক্তিপণ বাবদ তার কাছে থাকা পর্যায়ক্রমে নগদ ও বিকাশ থেকে ৫৩ হাজার টাকা ও দু’টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর সহকর্মী টিপু সুলতান জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে ডেমরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেজাউল হককে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। রেজাউল হক অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তদের মধ্যে রুদ্র, জাকির, রাকিব, রানা, সুজাত, কাইলা সোহেল, ইমন, ও রোহান সহ অজ্ঞাত ২০-২২ জন ব্যক্তি জড়িত ছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রুদ্রের নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী চক্র এলাকায় চাঁদা আদায়, জমি দখল, অপহরণ এবং সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। এদিকে রাজনৈতিক পরিচয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনার অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের ডেমরা থানা সভাপতির পদে থাকা রুদ্রকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়। রাজনৈতিক পদ হারানোর পরেও সে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, রুদ্র বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অপহরণ ও কিশোর গ্যাং পরিচালনার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।