রাজনীতি

বৈষম্যবিরোধী মঞ্চ থেকে দুর্বৃত্তায়নের চূড়ায়,শিক্ষার্থীদের আশা ভেঙে দিলো কিছু “নেতা”

  প্রতিনিধি ৫ আগস্ট ২০২৫ , ৫:২৩:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

ডি.এম. মাসুদ:

এক সময়ের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, বৈষম্যবিরোধী মঞ্চের অগ্রভাগের কিছু মুখ আজ বিতর্কিত ‘নেতা’। যাদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল ন্যায়ের সংগ্রাম, সেই কণ্ঠরাই এখন ব্যবসা, ক্ষমতা, এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে আলোচনায়। হতবাক সাধারণ শিক্ষার্থীরা—যারা একসময় আন্দোলনের পোস্টার টানিয়েছিল, স্লোগানে গলা মিলিয়েছিল, স্বপ্ন দেখেছিল সমতার সমাজ গঠনের—আজ তারা দেখতে পাচ্ছে, সেই নেতৃবৃন্দই বিলাসবহুল গাড়ি, রাজকীয় জীবনযাপন আর দম্ভে ডুবে আছেন।

🎓 প্রেক্ষাপট: এক সময়ের সংগ্রাম
২০২৪ সালে শুরু হওয়া ছাত্র ও চাকরি প্রত্যাশীদের ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগ, প্রেসক্লাব এবং দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরের রাস্তায় লাখো তরুণ-তরুণী নেমে এসেছিলেন সমতার দাবিতে।

তাদের কণ্ঠে ছিল—”কোটার নামে বৈষম্য চলবে না”, “কাজ চাই, অনুকম্পা নয়”, “প্রজাতন্ত্রে সকল নাগরিক সমান” ইত্যাদি সব স্লোগান।

🧨 কিন্তু কে জানতো…
আজ সেই আন্দোলনের মাত্র এক বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে—আন্দোলনের অগ্রভাগের কিছু মুখ রাজনৈতিক দলের ব্যানারে আত্মপ্রকাশ করেছে। কেউ প্রতিষ্ঠা করেছে নতুন দল, কেউ পুরোনো দলে যুক্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ার ‘পথ’ বেছে নিয়েছে।
আর এই ‘পথ’ শুধুই কি রাজনৈতিক?

সাধারণ কর্মীরা বলছেন—না, এটি কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি দুর্বৃত্তায়নের এক নতুন উপাখ্যান। এই তথাকথিত নেতারা এখন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে, ঠিকাদারি দখলে নিচ্ছে, সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছে, এবং চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে।

💰 তাদের আদি পরিচয়?
এদের অনেকেই কোটিপতির সন্তান—ঢাকার গুলশান, বনানী বা চট্টগ্রামের পাঁচতারকা জীবনের সাথে পরিচিত। বিলাসবহুল গাড়িতে চলাফেরা, দামি ব্র্যান্ডের পোশাক, বিদেশফেরত অভিজাত জীবনযাপন এদের জন্য নতুন কিছু নয়। অথচ তারাই যখন “বৈষম্যবিরোধী” ব্যানারে গরিব ছাত্রদের রাস্তায় নামায়, তখন সেটি হয় প্রহসনের নামান্তর।

🕵️ দুদক কোথায়?
সচেতন মহলের প্রশ্ন—এত আর্থিক উত্থান হঠাৎ কীভাবে? কোন উৎস থেকে আসছে এই বিলাসবহুল জীবনধারার পেছনের অর্থ?
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কি কিছুই নজরে আসছে না?
এখন হয়তো না।
কিন্তু ইতিহাস বলে, সব কিছুর হিসাব একদিন ঠিকই হয়।
আর ‘সাবেক’ হলে তখনই নজর পড়ে—জানাজায় কেউ দাঁড়ায় না, জবাবদিহির তালিকা শুরু হয়।

💬 তরুণ সমাজ কী বলছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন—

“আমরা তো তাদের নেতা বানাইনি চাঁদাবাজি করার জন্য! তারা আমাদের আশা নিয়ে খেলেছে। এখন দেখি তারা মন্ত্রী-এমপি হওয়ার দৌড়ে!”

এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লেখেন—

“আমাদের কণ্ঠ ব্যবহার করে তারা নিজেদের রাস্তা তৈরি করেছে। একদিন তারাই আমাদের চাকরি খাবে—এই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে যায়।”

📌 উপসংহার: আমরা ভুলে যাবো না!
বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক সুন্দর স্বপ্ন ছিল—যা আজ কিছু ‘লোভী’ নেতার হাতে কলুষিত। তবে ইতিহাসের বিচার আছে। কিছু মুখ হয়তো আজ প্রভাবশালী, কিন্তু জনগণের আদালত ভুলে না।

তাদের মুখোশ একদিন খুলবেই—আর তখন এই আন্দোলনের আসল সৈনিকেরা নতুনভাবে উঠে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।

🖋️ লেখক:ডি.এম. মাসুদ
📬 masud.analysis@reportmail.com
🌐 প্রকাশিত লেখা: www.khoborajkal.com

আরও খবর

Sponsered content