ঢাকার আজিমপুরে বাসায় ডাকাতির সময় অপহরণ করা সেই শিশুকন্যা জাইফাকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)

র্যাব জানায়, অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে অপহরণকারীকে গ্রেফতার ও শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের প্রেসব বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার ১৫ নভেম্বর সকাল নয়টার দিকে আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার লালবাগ টাওয়ারের পাশের গলি থেকে ফারজানা নামে নারীর বাসায় ডাকাতির সময় নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নেওয়ার পাশাপাশি তারা একটি বাচ্চাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তী ওই শিশুর পরিবার শিশুকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-১০’-এর কাছে সহায়তা চায়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে র্যাব-১০’-এর একটি দল মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণের পরিকল্পনাকারী ফাতেমা আক্তার শাপলাকে (২৭) গ্রেফতার করে। অপহৃত আট মাস বয়সী শিশুকন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ওই নারী ডাকাতি ও অপহরণের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে।
র্যাব জানায়, আরিসা জান্নাত জাইফার মায়ের নাম ফারজানা আক্তার। তিনি চাকরি করেন ও পিতা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আজিমপুরের লালবাগ টাওয়ার এলাকায় ভাড়া বাসায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিগত তিন বছর বসবাস করে আসছেন।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অপহরণের এক সপ্তাহ পূর্বে ভিকটিমের মায়ের সাথে অফিসে যাতায়াত করার সময় গ্রেফতারকৃত শাপলার পরিচয় হয়। এ সময় শাপলা ভিকটিমের মায়ের কাছে তার নাম রাইসা ও তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়। আসামি ফাতেমা আক্তার শাপলা জানায়, সে অবিবাহিত ও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকুরি করে। গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ভিকটিমের মা ফারজানা আক্তারকে আরো জানায়, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভাল রুম দরকার ও তাকে সাবলেট হিসেবে ভিকটিমের বাসায় ভাড়া দিলে পুরো দিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুকে (অপহৃত ভিকটিম) দেখভালও করতে পারবে। মা ভিকটিমের দেখাশুনার কথা চিন্তা করে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তারকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দেয়ার জন্য রাজি হয়। পরবর্তী গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকালে বাসায় আসে এবং দুই হাজার টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে দিয়ে বাসায় রাত্রি যাপন করে। পরের দিন সকালে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার মা ফারজানা আক্তারকে জানায়, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে। পরবর্তী সকাল সাড়ে আটটায় গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে তিন ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগীরা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে ভিকটিম জাইফাকে নিয়ে গ্রেফতারকৃতের বাসায় চলে আসে এবং তার সহযোগীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে।
পরবর্তী গোয়েন্দা নজরদারী ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে ভিকটিম জাইফাকে উদ্ধারপূর্বক অপহরণের পরিকল্পনাকারী ফাতেমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।