প্রতিনিধি ২৪ জুলাই ২০২৫ , ১:৫২:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সচিবালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে চার শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। শুনানিতে বিচারক বলেন, বাংলাদেশটার কোনও লাইফ নেই। অলরেডি পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামসেদ আলম এই আদেশ দেন। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে চার আসামিকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষ জামিন চেয়ে আবেদন করে।
আসামি জেফরি অভিষেক শিকদার ও শাকিল মিয়ার পক্ষে দাঁড়িয়ে আইনজীবী সালাহউদ্দিন খান বলেন, আসামিরা মেধাবী ছাত্র। আবেগে পড়ে সচিবালয়ে গিয়ে ভুল করে ফেলেছে। একজনের সামনে পরীক্ষা রয়েছে। তাদের ইচ্ছাকৃত কোনো অপরাধ ছিল না। জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ দিলে সত্যটা পরিষ্কার হবে।
তানভীর নামের আরেক আসামির আইনজীবী বলেন, তিনি ধনিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এরপর বিচারক জানতে চান, বাকিদের পক্ষে কেউ আছেন কি না। তখন আইনজীবী তাহমিনা আক্তার লিজা জানান, আমি আবু সুফিয়ানের পক্ষে। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কারাগারে পাঠালে তার ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইমোশনাল হয়ে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন আসামিদের জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আসামিরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে নয়। তারা সচিবালয়ে ঢুকে ভাঙচুর করেছে। তাদের ছবি সিসিটিভি ফুটেজে রয়েছে। তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, অর্থদাতাদের চিহ্নিত করতে জিজ্ঞাসাবাদ দরকার।
আদালতে আবু সুফিয়ান নিজেই জানান, তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইবি) বিভাগের ছাত্র এবং সচিবালয়ে যাননি। তার বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পথে আমাকে ধরা হয়। আমি সচিবালয়ে যাইনি। জুলাই আন্দোলনে বিজয় একাত্তর হলে সহ-সমন্বয়ক ছিলাম, ছাত্রলীগে কখনোই ছিলাম না।
বিচারক বলেন, এখন দেশের ভিতরে-বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে। যারা জুলাই আন্দোলনে ছিলেন, তারাই এখন ভুক্তভোগী? তারা শেষ হয়ে গেছে। চারজনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে ভবিষ্যতে তারা চাকরি পাবে? এত গোল্ডেন এ প্লাস দিয়ে কী হবে? যেখানে দেশেরই কোনো ভবিষ্যৎ নেই, সেখানে এসব ছেলেদের ভবিষ্যৎ কীভাবে থাকবে?
রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাধা দিলে আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। বিচারক তখন বলেন, আপনারা যদি হট্টগোল করেন, তাহলে আমি উঠে যাবো। উনি (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) ব্যক্তিগত স্বার্থে কিছু করছেন না। ওনারা কয় টাকা পান রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলে? আপনারা তো আরও বেশি পান।
এরপর বিচারক বলেন, দেশে এখন কার্যত আইনশৃঙ্খলা নেই। রাষ্ট্র না থাকলে সার্টিফিকেট দেবে কে? সচিবালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের মাথা। যদি মাথাই আক্রান্ত হয়, তাহলে শরীরের আর মূল্য কী? আমরা এখন একটা পরিবর্তনের সময় পার করছি। ইউনূস সাহেব চেষ্টায় আছেন, সফল হচ্ছেন কিনা জানি না। আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপির শাসন দেখেছি। এভাবে চললে হয়তো জামায়াতের শাসনও দেখতে হতে পারে। একটি ভালো রাষ্ট্র গঠনে তিনটি প্রজন্ম সময় লাগে। আমাদের প্রজন্ম সম্ভবত সেটা দেখবে না, তবে ভবিষ্যতের প্রজন্ম হয়তো দেখবে।
সব শুনানি শেষে আদালত চার আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।