জাতীয়

আওয়ামী লীগ দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে…ডা.শফিকুর রহমান

  প্রতিনিধি ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ১১:৩৭:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক নারায়নগঞ্জ:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েও দেশের মধ্যে উসকানি দিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছে। মুক্তিপাগল মানুষ এসব সহ্য করবে না। এই সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। পতিত স্বৈরাচার সরকারের আমলে দেশ থেকে গত সাড়ে ১৫ বছরের ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
সেগুলো ফেরত এনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এদেশের কল্যাণ সুষম ব্যয় করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ধান্দাকে ঘৃণা করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন দেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে ঘুষ দুর্নীতি থাকবে না।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামের জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন থানা, উপজেলা এবং ওয়ার্ড থেকে বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা এবং দলীয় প্রতীক দাঁড়ি পাল্লা হাতে নিয়ে দলীয় বিভিন্ন স্লোগান ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী স্লোগান দিয়ে জনসভায় যোগ দিতে দেখা যায়।
জনসভায় দলটির পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়। জনসভাস্থলে সাংবাদিক, দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীদের বসার জন্য সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও দেখা গেছে।
এ সময় ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, গত ৫৪ বছর এই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আর সুকৌশলে এই বিভক্তি সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করেছিল। তারা বিভক্তির শুরু করেন পাহাড়িদের নিয়ে। তারা ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা সবাই বাঙ্গালী। কিন্তু এটা নিয়ে পাহাড়িরা প্রতিবাদ করেন। তখন থেকে এই যে বিভক্তি শুরু হয়েছে তা এখনো চলমান রয়েছে।
এখনো ওইখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় নাই। তারা এখন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এই বিভক্তি যতোদিন থাকবে ততোদিন এই জাতির মধ্যে একতা সৃষ্টি হবে না। যা দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর প্রত্যক্ষ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের একজন নাগরিকের সব অধিকার পাওয়ার অধিকার আছে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আমাদের এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন। আওয়ামী লীগ দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে, বিচার ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ পুরোদমে ধ্বংস করে দিয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এতো অহংকার ভালো না। দাম্ভিকতা ভাল না। সন্ত্রাসকে কখনো প্রশ্রয় দিতে হয় না। তাহলে দুনিয়াতেই তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। এছাড়া আখিরাতে তাকে শূলে চড়তে হবে।
নারায়ণগঞ্জের মানুষ এতোদিন অনেক কষ্টে ছিল। এই নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের তৎকালীন জামায়াতের আমীর ছিলেন গোলাম আযম। তার বিরুদ্ধে এই শহরের এক গডফাদার শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৭২ ফিট লম্বা ব্যানার টানিয়েছিল। তাতে লিখা ছিল, নারায়ণগঞ্জে অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
ডিসি, এসপির উপস্থিতিতে গডফাদার শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে খুনের অগ্রীম মামলা করে রাখেন। আমি গোলাম আযমকে হত্যা করব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযম সাহেব কারাগারে মারা যান। গডফাদারের সুযোগ হয় নাই তাকে হত্যা করার। আজ তিনি কোথায়? নারায়ণগঞ্জে নেই? এতো অহংকার ভাল না। দাম্ভিকতা ভাল না।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসকে কখনো প্রশ্রয় দিতে হয় না। তাহলে দুনিয়াতেই তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। এছাড়া আখিরাতে তাকে শূলে চড়তে হবে। যেটা হবে আগুনের মহাকুণ্ড। তাই বলি, তওবা করুন। মানুষের মতো মানুষ হন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সবার আগে শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিবে। এদেশের ছাত্র সমাজের জন্য উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা করে তুলবে। শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পর কাউকে আর বেকার থাকতে হবে না। প্রত্যেকের জন্য যথোপযুক্ত কর্মের ব্যবস্থা করা হবে। নারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। এদেশের কৃষি শিল্প, এগ্রো শিল্পগুলোকে আরও সমৃদ্ধশালী করা হবে।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর কোন নেতা কোন কর্মী কোথায় কার জমি দখল করেছে, কার ইজ্জতের উপরে হাত দিয়েছে তা আমাদের জানতে দিন। কার জীবনের উপরে হাত দিয়েছে আমাদের বলুন। আমরা কথা দিচ্ছি এর ন্যায়বিচার করব। আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা ক্ষমতায় যাই বা না যাই এটি আমাদের মানবিক দায়িত্ব, সেটি আমরা পালন করব।
এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দরা তাদের বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের সংগঠিত সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। জুলাই আন্দোলনের নিহত রিয়া গোপ, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোকিত মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এছাড়া র‌্যাবের মাধ্যমে সংগঠিত বহুল আলোচিত সাত খুনের বিচার কার্যকরের দাবিও জানান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে আয়োজিত জনসভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরি ষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, নারায়ণগঞ্জ মহানগরী সাবেক আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মমিনুল হক সরকার। এছাড়া কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দরাও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
জামায়াতে ইসলামের এই জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ট্রাস্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয়কে রয় চৌধুরী, পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি উত্তম কুমার সাহা, পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার শিখন।

আরও খবর

Sponsered content