প্রতিনিধি ২৪ জুন ২০২৫ , ৭:৪২:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক ভোলা
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদী তেঁতুলিয়ায় অবৈধ বাঁধা ও চাই জাল ফেলে প্রতিদিনই ধ্বংস করা হচ্ছে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী। নদীটির বিভিন্ন এলাকায় এসব জালের বিস্তার এবং সংশ্লিষ্ট মহলের নীরবতায় হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয় জেলেদের জীবিকা।
তেঁতুলিয়া নদী মেঘনার একটি শাখা। প্রায় ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর গড় প্রস্থ প্রায় ৪ কিলোমিটার। এটি শুধু যোগাযোগ ও পরিবহনের মাধ্যমই নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবেও পরিচিত।
তবে সম্প্রতি ভোলা সদর থেকে শুরু করে বোরহানউদ্দিন, লালমোহনের নাজিরপুর, গাইমারা, কচুয়াখালী, গজারিয়া, পাঙ্গাশিয়া, কাশেম মিয়ার বাজার, বাংলা বাজার, ঘোষেরহাট ও বকসি পর্যন্ত নদীজুড়ে অবৈধ বাঁধা জাল ফেলে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির অসাধু জেলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ
আজ ২৪ জুন,স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব এলাকায় অবৈধ মশারি জাল, চরঘেরা ও বেহুন্দি জাল ফেলে মাছের পোনা, ডিম, রেণু এবং জাটকা নিধন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে শুধু ইলিশ নয়, বিলুপ্তির পথে হাঁটছে আরও অনেক দেশীয় মাছের প্রজাতি।
গজারিয়া খালগোড়ায় আওলাদ মাঝি, জামাল মাঝি, কামাল মাঝি, মিলন মাঝি, জালাল মাঝি, আল ইসলাম মাঝিসহ পুরো তেঁতুলিয়ায় প্রায় ১৫০-২০০ জন ব্যক্তি নদীতে বাঁধা জাল ফেলেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এদের কারও একটি, কারও তিন-চারটি পর্যন্ত জাল রয়েছে।
এছাড়া পাঙ্গাশিয়া ও ঘোষেরহাট এলাকায় আলাউদ্দিন মাঝি, লিটন মাঝি ও হারুন মাঝি; কামাল মাঝি,রহিম মাঝি,বাহাদুর মাঝি,ইলিয়াস মাঝি,জাকির মাঝি, মন্নান মাঝি, শামসু মাঝি,জান্টু মাঝি,সাদ্দাম মাঝি, নজরুল মাঝি,জামাল মাঝি, স্বপন মাঝি,মিলন মাঝি,দুলাল মাঝি, আকবর মাঝি।
গজারিয়া রাস্তার মাথায় রফিক, কালু, জাকির নামেও জাল রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওলাদ মাঝির ছেলে সুমনের সঙ্গে নৌ রক্ষায় দায়িত্বশীলদের লালমোহন জোনের কিছু সদস্যের ‘সখ্যতা’ রয়েছে। অভিযানের আগে তাকে ফোন করে সতর্ক করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তেঁতুলিয়া ছাড়াও আর কোথায় চলছে অবৈধ জালের উৎসব
তেঁতুলিয়া নদী ছাড়াও ভোলা সদর উপজেলার কোড়ালিয়া, বালিয়া, শান্তিরহাট, বাঘমারা, দক্ষিণ ভেলুমিয়া, পাকারমাথা, শাজাহানবাজার, ভেদুরিয়া চটকীমারা, মেঘনার চর এলাকা, কানিবগার চর, গাজীপুর, মধুপুর, চর বৈরাগী, চরজহিরুদ্দিন, কলাতলীর চর, চরডেম্পিয়া, চরপাতিলা, ঢালচর ও বাসান চর এলাকার ডুবোচরেও অবৈধভাবে এসব জাল বিস্তার করা হয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় মাছের অভয়াশ্রম টিকিয়ে রাখতে কোস্ট গার্ডের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তেঁতুলিয়ায় অবৈধ বাঁধা জালের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত জেলেরা নিষিদ্ধ বাঁধা বা বেহুন্দি জাল বসায়। আমরা সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেই।এখন পর্যন্ত ৪০টির উপরে বাঁধা জাল আমরা ধ্বংস করেছি। তেঁতুলিয়ায় বাঁধা জালের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য, থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মদদে এসব কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় মৎস্যজীবী এবং মৎস্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
* তেঁতুলিয়া নদী ও মেঘনার শাখা নদীগুলোতে নিষিদ্ধ জাল ফেলার অনুমতি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে।
* জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজন স্থানীয় উদ্যোগ ও প্রশিক্ষণ।
* কোস্ট গার্ড ও প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।